ভুল- ৩২: শাখিনা খাতুন।
জাহাংগির চিঠিটা রেবার হাত থেকে নেয় এবং রেবা কিছুক্ষণ ওদের পরিবারের লোকজনের সাথে বসে গল্প করে।
হেনা- রেবার উচিৎ ছিল ওদের খেয়াল না করে নিজেরা বিয়ে করে নেওয়া।
জাহাংগিরের মা- সেটা না, বাবা মাকে সাথে করে নিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে এটাই সঠিক। কিন্তু সানুতো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত বোকা ছেলে ছিল বলে আমাদের ধারনা ছিলোনা। খবরটা শুনে আমরা প্রথমে বিশ্বাস করিনি। ভেবেছি কোথাও কেউ ভুল সংবাদ রটাচ্ছে। তোর সাথে যদি মনোমালিন্য হতো তাহলে বিষয়টা বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। এরকম মা বাবা যেন দুনিয়াতে কারও না হয়। বাবারে বাবা একটা জলজ্যান্ত ভাল সুস্থ ছেলেকে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। দেখিস রেবা আমি বলে রাখলাম ওদের কপালে অনেক দুঃখ আছে। প্রতিদিন একটু একটু করে ওরা ভুলের জন্য অনুতাপ করবে। আর বাকি জীবন অনুতাপ করেই কাটাতে হবে।
জাহাংগিরের মা বোনের কথার কোন উত্তর রেবা দিতে পারেনা। শুধু চোখের পানি পড়তে থাকে।
জাহাংগির – মা অনেকদিন পর রেবা এসেছে একটু চা দেবে, আনন্দ করবে, না খুঁচিয়ে কাঁদাচ্ছ।
জাহাংগিরের মা – ঠিক আছে। মা তুই বস, আমি একটু চা করে আনি।
রেবা- না খালাম্মা আজ বসবোনা কাজ আছে। আর একদিন এসে অনেক গল্প করে আপনার হাতের বিখ্যাত চা খেয়ে যাবো।
হেনা- একদম ঘরকুনো হয়ে থাকিসনা, মাঝেমধ্যে আসবি। চল আমরা সবাই মিলে একদিন সিনেমা দেখে আসি। খালাম্মার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমার। তুই রাজী থাকলে জাহাংগিরকে বলবো আমাদের নিয়ে যেতে। আর শুনেছি গ্যারিসন হলে সুচিত্রা আর উত্তমের ছবি চলছে।
এমন সময় ওদের বড়ভাই হুমায়ুন ঘরে ঢোকে। সে বি এল কলেজে কেমেস্ট্রিতে মাস্টার্স করছে। দেখতে সুদর্শন। সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একটা পত্রিকার সাথে জড়িত আছে। মাঝে মাঝে কবিতা লেখে। জাহাংগিরদের আলোচনার শেষটুকু শুনতে পায়। সেও এ কথায় অংশগ্রহণ করে।
হুমায়ুন – হ্যা সত্যি খুব সুন্দর একটা ছবি চলছে উত্তম সুচিত্রার। তোমরা গিয়ে দেখে আসতে পার। আর জাহাংগির তুই ওদের দেখিয়ে নিয়ে আয় ভাল লাগবে। আমার কাজ আছে নাহলে আমি তোদের নিয়ে যেতাম। তা রেবা কেমন আছিস?
রেবা- ভাল আছি দাদা। আপনি কেমন আছেন?
হুমায়ুন – অনেক খারাপ ছিলাম কিন্তু আজ তোকে দেখে আমার মন ভালো হয়ে গেছে। শোন আমার কাছে অনেক বই আছে। যদি তুই পড়িস তবে তোকে পড়তে দেব। তবে একটা শর্ত আছে। বইটা হারানো যাবেনা আর পড়ে সময়মমত ফেরত দিতে হবে।
রেবা- ঠিক আছে দাদা যত্ন করে পড়বো আর ফেরত দেবো।
হুমায়ুন – তাহলে আজ তোকে মাদার তেরেসার জীবনীটা দেবো। একটু বোস আমি খুঁজে বের করি।
একথা বলে হুমায়ুন ওদের বুকসেল্ফ থেকে মাদার তেরেসার জীবন নিয়ে লেখা একটা চটি অনুবাদ করা বই রেবার হাতে দেয়।
হুমায়ুন – শোন রেবা দুঃখ করবিনা। গৌতম বুদ্ধকে চিনিস? তিনি কী বলেছেন জানিস? “জীবন দুঃখময়। দুঃখের কারন আছে। অজ্ঞানতাই দুঃখের কারন। ” এটা একশতভাগ সত্য কথা। বই পড়লে জ্ঞান বাড়বে, দুঃখ কমবে তাই বই পড়বি।
রেবা- ঠিক আছে দাদা আজ আমি যাই আবার আসবো।
একথা বলে রেবা বইটা নিয়ে জাহাংগিরদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
তারিখঃ ০৭/০৯/১৯













