বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একই সঙ্গে দিনটি বেদনারও। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। গভীর শ্রদ্ধায় বিজয়ের মাসে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের। যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবাইকেই আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছিÑ বিজয় দিবস মানেই বাঙালির নবজন্মকাল। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তাদের রক্তে, অবদানে মুক্ত হয়েছিল স্বদেশ। উড়ছে পত পত করে স্বাধীন দেশের লাল-সবুজের পতাকা। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর সাহসিকতার ফসল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অকুতোভয় সংগ্রাম, রাজনৈতিক নির্দেশনায় লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, যাদের অবদান এই স্বাধীন দেশ। একাত্তর হঠাৎ করে আসেনি। হঠাৎ করে কোনো কিছুই হয়নি। সুদীর্ঘ সময়ের আন্দোলন, সংগ্রামের পথ বেয়ে এমন এক পর্যায় এসেছিল, যেটা ছিল ওই আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়। সেটাই একাত্তর।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আমাদের গৌরবময় সোনালি ইতিহাস ভালো করে জানে না। সবারই উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফসল এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধকে জেনেছি ইতিহাস পড়ে, সিনেমা দেখে, দাদা-বাবার মুখ থেকে গল্প শুনে। তবে সাবধান! ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভুল ইতিহাস যেন চর্চা না হয়! ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে সুদীর্ঘ নয় মাস বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীনতার দুয়ারে নিয়ে উপনীত হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার আবাল বৃদ্ধ বনিতা। ফলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন এসে ধরা দেয়। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশিরভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে ২৩ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। তাই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, মুক্তির দিবস। বিজয় দিবস এলে আমাদের ভাবনা মনের হৃদয়ে উঁকি দিতে থাকে। তাই এদিন আমাদের সবার অতি প্রিয়, অতি আনন্দের দিন।
আর এ দিনটির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে ও বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা। মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশ নামে একটি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা।
বাঙালি জাতি যত দিন বেঁচে থাকবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহঙ্কার করবে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সব সমস্যা মোকাবিলায় সচেষ্ট হলে আমাদের অগ্রগতি ঘটবে দ্রুত। বিভেদ ভুলে আমরা সে পথেই অগ্রসর হব এই হোক এবার বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।
রায়হান আহমেদ : কলাম লেখক