করোনা-পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যাঃ ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

লেখক : ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ , মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ লন্ডভন্ড এবং বিপর্যস্ত। চোখের আড়ালে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, অদৃশ্য, অস্পৃশ্য একটা জীবাণুর তান্ডবে পৃথিবীব্যাপী মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, যা কল্পকাহিনিকেও হার মানিয়েছে। হঠাৎ করে ভাইরাসটি বদলে দিয়েছে আমাদের পৃথিবীর গতিময়তা। সমস্ত পৃথিবীকে করে তুলেছে নীরব, নিষ্প্রভ, নিষ্ক্রিয়, স্থবির এবং নির্জীব। মানুষকে করেছে স্তম্ভিত ও শঙ্কিত আর জীবনযাত্রায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এবং ওই বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের ৫ লক্ষাধিক মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, আর মৃত্যুবরণ করেছেন সাড়ে ৭ হাজারের মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যখন করোনার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় মোটামুটি দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের দিকে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই পৃথিবীব্যাপী প্রথম ঢেউয়ের পর শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় আবারও শুরু হয়েছে ভাইরাসটির তান্ডবলীলা। পাশাপাশি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার, প্রাপ্তি ও প্রয়োগ নিয়ে সারা পৃথিবীতে চলছে নানা উদ্যোগ, তোড়জোড় আর প্রতিযোগিতা। অনেক দেশেই ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। গবেষণাগার থেকে জনগণের মধ্যে ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার প্রয়াসে ব্যস্ত প্রতিটি রাষ্ট্র। এত কিছুর মধ্যেও স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, করোনা আক্রান্তের ৮০ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও কিছু কিছু রোগীর মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কভিড-পরবর্তী জটিলতা। করোনা যেন পিছু ছাড়ছে না, আক্রান্ত অনেকেরই শরীর থেকে ভাইরাস চলে যাওয়া বা নেগেটিভ হওয়ার পরও ধ্বংসের রেশ কিন্তু রয়ে যাচ্ছে অথবা নতুন করে কিছু কিছু উপসর্গ বা দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিক নানা জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে। রোগীর শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে করোনাভাইরাস তার ধ্বংসলীলা চালায় না। ভাইরাসটি ফুসফুসসহ রোগীর হার্ট, কিডনি, লিভার, রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সুস্থ হওয়ার পরও বা করোনা নেগেটিভ হওয়া বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মানেই সব ভোগান্তির অবসান নয়। সুতরাং করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও চাই বাড়তি সতর্কতা ও চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকা। নিচে করোনা-পরবর্তী সম্ভাব্য জটিলতাগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

১. পোস্টভাইরাল এসথেনিয়া বা পোস্টভাইরাল ফ্যাটিগ সিনড্রোম : শুধু করোনা নয় যে কোনো ভাইরাসজনিত রোগের পর শারীরিকভাবে প্রচ- দুর্বল লাগা, অবসাদ বা ক্লান্তিবোধ হওয়া, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, হাত-পা অবশ অবশ ভাব, ঝিঁঝিঁ লাগা, মাংসপেশি, হাড় বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কোমরে ও মেরুদন্ডে ব্যথা, অরুচি, অস্থিরতার মতো কিছু লক্ষণ দেখা যায়। একে বলে পোস্টভাইরাল এসথেনিয়া। করোনা-পরবর্তী এক-তৃতীয়াংশ রোগী এ সমস্যায় ভোগেন। অল্প পরিশ্রমে অনেকে ক্লান্ত হয়ে যান। হাঁটা-চলায় ও দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়। রোগ থেকে সেরে ওঠার পর দুই থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ এ ক্লান্তির রেশ থেকে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অবসাদ আর ক্লান্তি সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে।

২. শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা : করোনাভাইরাস সর্বপ্রথম মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুসের। ফলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়! সংক্রমণ তীব্র হলে অনেকের ভেনটিলেটর সাপোর্টেরও প্রয়োজন পড়ে। করোনাকালে শুরু হওয়া শ্বাসকষ্ট ও কাশি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও মাঝেমধ্যে হতে পারে। ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয় তাতে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়। এ ক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে আসতে বেশ সময় লাগে। তাই দেখা যায় সামান্য পরিশ্রমে বা হাঁটাচলা করতে অনেকে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে যাদের সংক্রমণ তীব্র ছিল, যারা আইসিইউতে থেকেছেন তাদের শ্বাসক্রিয়া আবার স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগে। করোনাভাইরাস ফুসফুসের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করতে পারে। তাই ফুসফুসের ক্ষত বা প্রদাহ আছে কি না তা সুস্থ হওয়ার পর ভালোভাবে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ ফুসফুসে এ ভাইরাসের অধিক ক্ষতি করলে ফাইব্রোসিস বা ইন্টারস্টিসিয়াল লাং ডিজিজের মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। অনেকের দীর্ঘমেয়াদি কাশি এমনকি হাঁপানি রোগের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

৩. স্বাদ ও ঘ্রাণ ক্ষমতা কমে যাওয়া : করোনা রোগীদের খাবারে অরুচি এবং ঘ্রাণ না পাওয়ার সমস্যা থেকে যায় বেশ কিছুদিন। যারা আইসিইউতে ভেনটিলেটরে ছিলেন তাদের অনেকের খেতে এবং গিলতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও গলায় কিছু আটকে আছে কিংবা খাবার আটকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। অনেকের কণ্ঠস্বরেও সমস্যা হতে পারে, কণ্ঠ ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যাওয়া, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া তার মধ্যে অন্যতম।

৪. হৃদরোগের সমস্যা : আগে থেকে হৃদরোগ থাকা রোগীদের করোনা সংক্রমণ হলে তাদের রোগের তীব্রতা বা মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। তবে আগে থেকে হৃদরোগ না থাকলেও অনেকের করোনা-পরবর্তী নতুন করে হৃদযন্ত্রের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন : বুকে ব্যথা, বুকে চাপ, অস্থিরতা, বুক ধড়পড়, শ্বাসকষ্ট এমনকি পায়ে পানি আসা ইত্যাদি। করোনাভাইরাস মূলত হৃদযন্ত্রকেও আক্রান্ত করে ভাইরাল এন্ডোকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস, পেরিকার্ডাইটিসসহ ডায়লেটেড কারডিওমাওপ্যাথির মতো সমস্যা তৈরি করে হৃদযন্ত্র দুর্বল করে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো মৃদু এবং সহজে নিরাময়যোগ্য। তবে কারও কারও হার্টের রিদমেরও সমস্যা হয়, হার্ট বিট কখনো কমে যায় বা খুব বেড়েও যায়। আবার করোনারি আর্টারিতে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৫. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা : অনেক সময় করোনা আক্রান্তরা মাথা ঘোরা, তীব্র মাথা ব্যথা, সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রম বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতার মতো সমস্যায় ভোগেন। এমনকি মস্তিষ্কের ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে ব্রেন স্ট্রোকও ঘটছে। এসব রোগের ফলে অজ্ঞান হওয়া, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস, ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা, স্পর্শ বা অনুভূতি বোধের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

৬. রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তনালির বিভিন্ন সমস্যা : শরীরের বিভিন্ন রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা করোনা আক্রান্তের অন্যতম জটিলতা। রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে সংশ্লিষ্ট রক্তনালি দ্বারা সরবরাহকৃত অঙ্গ যেমন ফুসফুস, হার্ট, ব্রেন, কিডনি, হাতের বা পায়ের গভীর রক্তনালি ইত্যাদির ক্ষতি হতে পারে।

৭. কিডনি ও লিভারের সমস্যা : বিশেষত যারা আগে থেকেই কিডনি, লিভারের বিভিন্ন রোগে ভোগেন তাদের অনেকের করোনা সংক্রমণের ফলে কিডনি বা লিভারের ওপর সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ায় এসব অঙ্গ অকার্য হয়ে যেতে পারে। তাই রোগ-পরবর্তী লিভার বা কিডনি রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৮. ডায়াবেটিস : যারা আগেই ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত ছিলেন দেখা যায় করোনা-পরবর্তী তাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। আবার দেখা যায় আগে ডায়াবেটিস ছিল না কিন্তু করোনাকালীন ব্যবহৃত ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড) বা ভাইরাসের প্রভাবে পরবর্তী সময়ে তাদের নতুন করে ডায়াবেটিস বা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সাময়িক, কিছুদিন পর এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যদি সময়ের সঙ্গে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না আসে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৯. উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণহীনতা : উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই তাদের অনেকেই করোনা-পরবর্তী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিসের মতো এও কিছু দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে দীর্ঘদিন রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১০. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা : করোনা-পরবর্তী রোগীদের নানা রকম পেটের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন অ্যাসিডিটি বা গ্যাস হওয়া, পাতলা পায়খানা কিংবা ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, বদহজম ইত্যাদি। তবে করোনা-পরবর্তী খাবার-দাবারের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখলে দ্রুত এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

১১. মানসিক সমস্যা : করোনা-পরবর্তী নানা রকমের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক রোগী বলেন তাদের কিছুই ভালো লাগে না, কিছু করতে ইচ্ছা করে না, অনেকের প্যানিক ভাবটা থাকে। হঠাৎ মনে হয় শ্বাস বা দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিষণœতা, মানসিক অস্থিরতা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ, রুক্ষ আচার-আচরণ, কাজে মনোযোগের অভাব, উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে চিকিৎসা গ্রহণ কিংবা আইসিইউতে থাকাকালীন ভীতিকর স্মৃতির আতঙ্ক বা মানসিক চাপ থেকে বেরোতে পারেন না। আবার অনেকে স্বজন বা প্রিয়জনকে হারিয়ে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই দেখা যায় অনেক সময় করোনা-পরবর্তী মানসিক সমস্যা রোগীকে দীর্ঘমেয়াদে ভোগাতে পারে।

১২. ঘুমের সমস্যা : করোনা আক্রান্তের ফুসফুসে কিংবা মস্তিষ্কসহ শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন হয়, যার ফলে রোগীর ঘুমের ওপর সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। হয় সহজে ঘুম আসে না বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেকে ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নও দেখেন। এ ছাড়া মানসিক চাপ বা টেনশনের কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আবার স্বাভাবিক ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যায়।

করোনা-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলো কমাতে করণীয় :

* পরিমিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল যোগ করুন। প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খান। অনেকের খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে নরম ভাত, বেশি করে সেদ্ধ করা নরম খাবার দিয়ে খাদ্যাভ্যাস শুরু করুন।

* এ সময়ে অনেকের মুখে ঘা হতে পারে। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন। নিয়মিত হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া ও কুলকুচা করলে আরাম পাবেন। পাশাপাশি নিয়মিত দাঁত ও জিব পরিষ্কার করুন।

* যারা আগে শারীরিক পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যায়াম করতেন তাদের সতর্ক হতে হবে। করোনা থেকে সেরে উঠেই শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটাচলা শুরু করবেন না। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে তারপর ধীরে ধীরে অল্প পরিশ্রমের কাজ বা হাঁটাচলা দিয়ে পুনরায় শারীরিক পরিশ্রম শুরু করা যেতে পারে।

* করোনা থেকে সেরে উঠেই পূর্ণোদ্যমে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করতে পারবেন, এমনটি আশা করা ঠিক নয়। হসপিটাল থেকে ফেরার পর কিছু দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকা ভালো। প্রথমেই বেশি পরিশ্রমের কাজ করবেন না। ধীরে ধীরে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করুন এবং সহ্যক্ষমতা অনুযায়ী কাজের পরিধি বাড়ান।

* নিয়মিত সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন, ক্লান্তি লাগলে বিশ্রাম নিন। ধূমপান বন্ধ করুন। সন্ধ্যার পর চা ও কফি পরিহার করুন। ঘুমের অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

* করোনা-পরবর্তী ফুসফুসের জটিলতার জন্য দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করুন, প্রয়োজনে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন, বাড়িতে পজিশনিং আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। এর পরও বেশি শ্বাসকষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

* করোনা থেকে সেরে ওঠার সময় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্টেরয়েড ওষুধের ব্যবহার আর খাবার-দাবারের পরিবর্তনের কারণে রক্তে সুগার ওঠানামা করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

* যার যার ধর্মীয় চর্চা অবশ্যই করতে থাকবেন, এগুলো মনে প্রশান্তি এনে দেবে।

* মানসিক সমস্যা সমাধানে মন প্রফুল্ল রাখতে চেষ্টা করুন। গান শোনা, বই পড়া বা মনকে প্রফুল্ল করে এমন কিছু করুন। ধীরে ধীরে নিজের পছন্দের কাজ বা শখগুলো শুরু করুন। মনোযোগ ফিরে পেতে ধাঁধা, শব্দজট সমাধান অভ্যাস করুন। বন্ধুবান্ধব ও আপনজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পরিবার ও সমাজের অন্যদের উচিত হবে এসব রোগীর পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তবে বেশি মানসিক অশান্তিতে ভুগলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, খুব কমসংখ্যক রোগীর করোনা-পরবর্তী এসব জটিলতা দেখা দেয়, যার অধিকাংশই সাময়িক। তাই অযথা ভয় পাওয়ার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে, নিজের কিংবা অন্য কারও এ ধরনের জটিলতা দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ করোনা মহামারীর পর পৃথিবীব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞানের পরিবর্তন হবে। তবে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, সবকিছুর আগে আমাদের দেহঘড়ির সুস্থতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

তারিখঃ ১০/০১/২০২১