গুঞ্জন-গুঞ্জরন ছিল। অধীর অপেক্ষা ছিল। একটু দেরীতে হলেও সব প্রতিক্ষার অবসান হলো। রাজনীতিতে অভিষেক ঘটলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের। রবিবার (২৩ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল সভায় তিনি অংশগ্রহণ করেন, দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ. এম. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে তারেক রহমানের পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন জাইমা রহমান। সেই সময়ই এটি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দেয়। রাজনীতিতে তার সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাকেও জাগ্রত করে। রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য নাতনি জাইমা রহমান তার বাবার প্রতিনিধিত্ব করার মধ্যে দিয়েই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে জাইমা রহমানের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে।
জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমানের বড় মেয়ে জাইমা রহমান। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে বসবাস করলেও বেগম খালেদা জিয়ার বড় নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। ২০১৯ সালে বার অ্যাট ল’ পাশ করার পর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা জাইমা রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে নজর আরও বাড়িয়েছে।
- রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে করেছে জাগ্রত
- বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামোয়
- তাঁর সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত
- জাইমা রহমানের যোগ্যতা-কার্যক্রমে উপকৃত হবে দল
দলীয় সূত্র জানায়, এবার প্রথমবারের মতো দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল সভায় ব্যারিস্টার জাইমার এই উপস্থিতি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাজনৈতিক মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন হলেও, ছোটবেলায় দাদি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক আয়োজনগুলোতে তাকে প্রায়ই দেখা যেত।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করছেন, ব্যারিস্টারি শেষ করার পর জাইমার দলীয় সভায় অংশ নেওয়া বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামোয় তার সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত। দেশ-বিদেশে দলীয় কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি সাংগঠনিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগকে আরও শাণিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাইমা রহমান একসময় বাংলাদেশে যাবেন। রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন। একসময় দেশেরও দায়িত্ব নেবেন। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
যদিও জাইমা রহমানের রাজনীতিতে আসা নিয়ে বিএনপি এখনও কোনো ঘোষণা দেয়নি কিংবা জাইমা রহমান নিজেও বলেননি তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তবে জাইমা রহমানের যোগ্যতা-কার্যক্রম যদি দলের জন্য উপকারী হয়, দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে অবস্থায় জিয়া পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে ভবিষ্যতে তার দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আছে। এটা দোষের কিছু না। কারণ, ভারতীয় উপমহাদেশে পারিবারিক রাজনীতির ঐতিহ্য রয়েছে, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।











