বাংলাদেশের ১০০% রাষ্ট্রায়ত্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেড (ইডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ মৃধা বলেন, ‘বিগত সময়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেখানে ইডিসিএল ৬০ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ করত; সেখানে বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ করছে। সময়োপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার ও সুশাসনের মাধ্যমে ইডিসিএল এখন একটি স্থিতিশীল ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানের দিকে হাঁটছে। ঢাকা, খুলনা ও বগুড়া প্রকল্পের আধুনিকায়ন শেষ হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হাসপাতালের পুরো চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে’।
তিনি বলেন “প্রতিদিন ৩০ মিনিট অতিরিক্ত উৎপাদন সময় যুক্ত করায় বছরে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৬ কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। এদিকে সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আসায় ওভারটাইম ব্যয় কমেছে ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকারও বেশি। ফলে কর্মীরা এখন নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করছেন। অন্যদিকে, সাড়ে ৩ হাজার অতিরিক্ত ও অদক্ষ কর্মী থেকে লোকবল ৫৭৭ জন কমিয়ে আনার পরও পূর্বের তুলনায় ৫৯ কোটি টাকার বেশি উৎপাদন বেড়েছে। এতে বেতন বাবদ সাশ্রয় হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকট কাটিয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে।
ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা আনতে সিন্ডিকেটমুক্ত টেন্ডার পদ্ধতি চালুর পর কাঁচামাল ক্রয়ে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে ২৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকারও বেশি ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। আগে কয়েকজন সরবরাহকারী মিলে দাম বাড়ালেও এখন বাজারদর অনুযায়ী উপকরণ সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে। গোপালগঞ্জ প্রকল্পে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও স্যালাইন উৎপাদনের ট্রায়াল চলছে। পাশাপাশি আইভি ফ্লুইড (৫০০ ও ১০০০ মি.লি.) উৎপাদনের পরীক্ষামূলক চালানও সফলভাবে সম্পন্নের পথে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ চালু হলে দেশে স্যালাইন সরবরাহে বড় পরিবর্তন আসবে। অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ভ্যাকসিন প্রকল্পের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি চালু হলে দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
এ ছাড়া অবকাঠামো ও প্রযুক্তি উন্নয়নে ঢাকার তেজগাঁওয়ের ফ্যাক্টরির পাশে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এটি চালু হলে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ১৩ কোটি টাকার গুদাম ভাড়া সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ইআরপি সফটওয়্যার, সি-জিএমপি মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের কাজও বাস্তবায়িত হচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে বহুগুণে।”
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সামাদ মৃধা বলেন, ‘এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রায় ৩ হাজার ৫০০-এর বেশি লোকবল ছিল। যাদের বেশিরভাগই ছিল অদক্ষ-অযোগ্য। এদের বিগত সরকারের আমলের বিভিন্ন ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারা ম্যানেজমেন্টের কথা শুনত না, নিয়মকানুন মেনে চলত না, অযথা ঘোরাফেরা করত এবং প্রোডাকশন প্রোডাক্টিভিটিতে তাদের কোনো অবদান ছিল না। উল্টো তারা কাজের পরিবেশ নষ্ট করত। এজন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এবং ডিপার্টমেন্ট হেডের সুপারিশে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে (নোটিস দিয়ে এবং তিন মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে) ৫৭৭ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে ৪-৫টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলো যখন চালু করতে পারব ছাঁটাইকৃতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবারও কাজে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিব।’
ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘আগে যেখানে সাপ্লাইয়ার ছিল মুষ্টিমেয় ৪-৫টা, তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোম্পানিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে টেন্ডারে সবাই অংশগ্রহণ করছে। যার কারণে এখন অনেক কাঁচামাল সামগ্রীর দাম কমেছে এবং মানসম্মত কাঁচামাল-সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। সিরাজদিখানে ভ্যাকসিন প্রকল্প সম্পন্ন হলে দেশের ভ্যাকসিন থেকে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল থেকে শুরু করে সব ওষুধ বর্তমানের চাহিদা মিটিয়ে আমরা রপ্তানিও করতে পারব।’
তারিখঃ ০২/১২/২০২৫











