অস্ট্রেলিয়া সফরনামা [৮ – ১২ জুলাই ২০২৩]
লেখকঃ দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ডিরেক্টর, A2I.
• ক্রিকেটের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া দেশটি পরিচিত একটি নাম। সত্যিই, ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া দলটিকে কখনো গণনার বাইরে রাখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অ্যামেইজিং অস্ট্রেলিয়া শুধু কি ক্রিকেটেই অনবদ্য? না, দেশটির সম্পর্কে রয়েছে অবাক করা অসংখ্য তথ্য, যেগুলো হয়তো আমাদের অগোচরেই পড়ে আছে! আমাদের দাপ্তরিক সফরের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সফর করে যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছি তার থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
• AI FOR SOCIAL GOOD: STRENGTHENING CAPABILITIES AND GOVERNMENT FRAMEWORKS IN ASIA AND THE PACIFIC SUMMIT -এ অংশগ্রহণের জন্য এটুআই থেকে ৪জন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে ১জন ৮-১২ জুলাই পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া সফর করি। মূল আয়োজক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সহযোগী Australian National University, Google.Org, Association of Pacific Rim Universities (APRU) United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific (UNESCAP)
• Hawaii Pacific University, the Singapore National University & Korea Advanced Institute of Science & Technology (KAIST) এর গবেষকগণ আমাদের সামনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এবং আমাদের মতামত গ্রহণ করাসহ বাংলাদেশ টিমের বিশেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন ও অধ্যাপক Toni Erskine, অধ্যাপক Christina & Kal Joffers গবেষণাকাজগুলো সদয় তত্ত্ববাধান করেছেন। গবেষণাপত্রগুলো নিন্মরূপ:

(১) ১ম গবেষণাপত্র (থাইল্যান্ড) p, Aprajita Kaushik, Capucine Barcellona, Nikita Kanumoory Mandyam, And Si Ying Tan)
(২) ২য় গবেষণাপত্র (থাইল্যান্ড): ‘Who’s Rules? Addressing Challenges in Information Sharing in TPMAP’ (Dr Sarah Logan)
(৩) ৩য় গবেষণাপত্র (বাংলাদেশ): ‘Mobilizing Artificial Intelligence for Maternal Health in Bangladesh’ (Prof. Olivia Jensen, Dr Nathaniel Tan, and Dr Cornelius Kalenzi)
(৪) ৪র্থ গবেষণাপত্র (বাংলাদেশ): ‘Artificial Intelligence (AI) in Pregnancy Monitoring: Technical Challenges for Bangladesh’ (Dr Fariza Rashid and Dr M Arifur Rahman)
গবেষণাপত্রগুলো উপস্থাপনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর Brian Schmidt আমাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকরেন। পুরো প্রোগামটির আয়োজনে ছিলে অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা শহরে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেটি অস্ট্রেলীয় সংসদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে সাতটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা মহাবিদ্যালয় এবং একাধিক জাতীয় অ্যাকাডেমি ও ইন্সটিটিউট অবস্থিত।
• এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশিসহ ১৩ হাজার ৩২৯ জন স্নাত্মক এবং ১১ হাজার ২১ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। ভর্তি সহযোগিতার জন্য এখানে রযেছে ৪,৫১৭ জন কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের পরমান প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসহ সহকল ধরনের গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

• এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া। এখানকার মানুষ, জীবনযাপন এবং প্রকৃতি নিয়ে অদ্ভুত সব বিষয় ছড়িয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর বড় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর বিশালতা এত বেশি যে পুরো ইউরোপের প্রায় ৪৫টি দেশের সমান এই দেশটি। জনসংখ্যার তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার আয়তন অনেক বেশি। তাই এর মোট জমির ৯১ শতাংশই কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
• অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ১ শতাংশ ধনী মানুষ টানা ১০ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৫০০ ডলার আয় করছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ তারা প্রতি মিনিটে আয় করছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি।
• ভারতীয় উপমহাদেশের মত অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু ছিল একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ। ১৭৮৮ সালে ব্রিটিশরা অস্ট্রেলিয়াতে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৮৫০ সালে অস্ট্রেলিয়া ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি পায়। তবে মজার ব্যাপার হলো এ দ্বীপ মহাদেশটিতে ব্রিটিশরা আগমনের প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বেই স্থানীয় জনবসতি ছিল।
• অস্ট্রেলিয়ায়, প্রথমে এটিকে “নিউ সাউথ ওয়েলস” বলা হত। অস্ট্রেলিয়া একটি খুব বহুজাতিক দেশ এবং অনেক বাসিন্দা শুধুমাত্র ইংরেজী বংশোদ্ভূত নয়, অন্যদেরও বিভিন্ন অংশইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা। এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং একই সময়ে একটি মহাদেশ। এখানে গ্রীষ্মকাল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে। অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর একমাত্র রাজ্য যে সমগ্র মহাদেশ দখল করে আছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতি চতুর্থ বাসিন্দা একজন অভিবাসী।
• ব্রিটিশরা যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করে, তখন এখানে বন্দীদের স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ১লক্ষ ৬০ হাজারেরও বেশি অপরাধীকে অস্ট্রেলিয়ায় আনা হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে কয়েকজন পথিমধ্যে মারা যায়। তাই এখন পর্যন্ত দেশের কিছু বাসিন্দা ওই বন্দীদেরই বংশধর। যাইহোক, ভাল আচরণের জন্য মুক্তি পাওয়া বন্দীদের থেকেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ স্কোয়াড গঠিত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের প্রথম ইউনিটে ১২ জন লোক ছিল যারা বন্দীদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয়েছিল। এত কিছুর পরেও, অস্ট্রেলিয়ানরা আজ বিশ্বের সবচেয়ে আইন মান্যকারী নাগরিকদের মধ্যে বিবেচিত হয়।
• রাষ্ট্রের প্রধান হলেন ব্রিটিশ রানী। এটি মুদ্রায় চিত্রিত করা হয়েছে। সে পুরানো মুদ্রায় তরুণ। অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় পতাকার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে একটি “অ্যাবোরিজিনাল পতাকা” রয়েছে, এটি এতদিন আগে আনুষ্ঠানিক হয়ে উঠেছে। এখন এমনকি স্কুলে এটি স্বাভাবিক অস্ট্রেলিয়ান পতাকার পাশে ঝুলানো হয়।
• অস্ট্রেলিয়াতে অন্তত ২০০ উপজাতির বাস, যা দেশটিকে পৃথিবীর অন্যতম বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও জাতিগত ঐতিহ্যের অঙ্গনে পরিণত করেছে। অস্ট্রেলিয়ান টাকা টেকসই তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের ফিল্ম, তাদের একটি ছোট স্বচ্ছ জানালা আছে। অস্ট্রেলিয়াই প্রথম এই ধরনের অর্থ উপার্জন শুরু করেছিল। কেনাকাটার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়া অর্থহীন – সবকিছুই বেশ ব্যয়বহুল এবং ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম পছন্দ আছে।

• ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট ভবনটি দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম ভবনগুলির মধ্যে একটি। পর্যটকরা এ ভবনটি দর্শনের জন্য ১ম তালিকায় রাখেন। দেশি-বিদেশি যে কেহ খুব সহজেই [নিরাপত্তা নিশ্চিত করে] ভিতরে-বাহিরে দেখতে পারেন, ছবি তুলতে পারেন। এমনটি উচ্চ কক্ষের [সিনেট] ভিতরে গিয়ে বসতে পারেন ও ছবি তুলতে পারেন। সংসদ ভবনের ভিতরে পরতে পরতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। শিক্ষার্থী ও পর্যটকগণ যা দেখে তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারেন। আমরাও ভবনটি ৯ তারিখ বিকাল বেলায় দর্শন করি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
• একটি দু’টি নয়, অস্ট্রেলিয়ায় ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে ১৯ টি! অস্ট্রেলিয়ান কোট অফ আর্মস একটি ক্যাঙ্গারু এবং একটি ইমুকে একসাথে চিত্রিত করে৷ এর কারণ ছিল এই যে ক্যাঙ্গারু এবং এমুদের পিছিয়ে যাওয়ার শারীরিক ক্ষমতা নেই, তবে কেবল এগিয়ে যেতে পারে। পুরো অস্ট্রেলিয়াতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ১০ হাজারের ওপর সমুদ্র সৈকত রয়েছে! প্রায় নয় হাজার মাইল দীর্ঘ হাইওয়ে ওয়ান নামের সড়কটি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ মহাসড়কটি অস্ট্রেলিয়াতেই অবস্থিত।
• অস্ট্রেলিয়াতে মাউন্ট ডিজঅ্যাপয়েন্টমেন্ট বা হতাশার পাহাড় নামে একটি পর্বত রয়েছে। ৮০০ মিটার উঁচু পর্বতটি থেকে এর চারপাশে দৃশ্য এতই হতাশ করে যে এর আবিষ্কারকরা পর্বতটির জন্য এর থেকে ভালো নাম আর খুঁজে পাননি!
• অস্ট্রেলিয়া হলো এমন একটি দেশ যেখানে আপনি পাবেন উন্নত জীবন ব্যবস্থা। যেখানে সহিংসতা, ড্রাগস, বন্দুক কিংবা ঘৃণার সঙ্গে আপনাকে বসবাস করতে হবে না। জীবনযাত্রার মান এবং চমৎকার আবহাওয়ার জন্য এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় উদাহরণ।
• এরা চরম হাস্যরসের ভরপুর একটি জাতি। কথায় কথায় জোকস করে হেসে ওঠা এদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। অচেনা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে দৃষ্টি বিনিময় করতে দেখা যায় এদেরকে। অস্ট্রেলিয়ানদের দুই-তৃতীয়াংশ কথায় কথায় ‘নো ওরিস’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে কিন্তু তারা উদ্বিগ্ন না হওয়া বুঝায় না। শব্দ দুটি তাদের জন্য সাধারণ। এমনকি থ্যাংক ইউর উত্তরেও এরা নো ওরিস বলে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে যা সচরাচর দেখা যায় না।
• অদ্ভুত শুনালেও সত্য হলো অজিরা ‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ’ প্রবাদ বাক্যের একশো ভাগ মেনে চলা জাতি। সন্ধ্যার পরপর ঘুমিয়ে পড়া এবং অতি ভোর থেকে দিনের শুরু এখানে খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে সপ্তাহের শেষ দিন বা উইকেন্ডে তারা আনন্দ করেন গভীর রাত পর্যন্ত। পুরো সপ্তাহ কঠিন শৃঙ্খলা মেনে চলা আর উইকেন্ডে ফুর্তি করাই অস্ট্রেলিয়ানদের রুটিন বলা যায়।
• এখানে শীত বা গরম কোনোটিই অতিরিক্ত হয় না বললেই চলে। শীতের রাতে তাপমাত্রা মাঝেমধ্যে ২/৩ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়া কিংবা গরমে মাঝেমধ্যে ৩৮/৪০ ডিগ্রিতে চলে যাওয়া ছাড়া এদেশে আবহাওয়ার প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে। সাগরের নীল জলের ঠান্ডা বাতাস, বছরের একটা দীর্ঘ সময় নাতিশীতোষ্ণ অনুভূতির মজা একমাত্র এই দেশে আসলেই পাবেন।

• অস্ট্রেলিয়ার ৫৪ শতাংশ পরিবারের অন্তত ২টি করে গাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্রতি ১০ জন অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে একজন কর্মস্থলে যান পাবলিক বাসে চড়ে। এর চেয়ে বেশি মানুষ পায়ে হেঁটেই রওনা হন। অস্ট্রেলিয়ায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের সংখ্যা ১ লাখ বেশি। এর ৮টি রাজ্যের ৬টিতে পুরুষদের সংখ্যা ব্যাপকহারে কম। প্রতি পাঁচজনের একজন ধনশালী যা জনগণের ২২ শতাংশ।
• ক্যানবেরা একটি কারণে রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী বলা যায় শিরোনামের জন্য, দুটি বড় রাজ্য লড়াই করেছিল – মেলবোর্ন এবং সিডনি। যদিও সিডনি সবচেয়ে জনবহুল শহর, তার পরে মেলবোর্ন। তাদের মধ্যে কোনটি রাজধানী হবে তারা কোনোভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এরপর আপস করার সিদ্ধান্ত হয় এবং নেয় বড় শহর, যা এই দুই রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল। হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, সিডনি থেকে ২৪৮ কিলোমিটার এবং মেলবোর্ন থেকে ৪৮৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহরটিকে রাজধানীর বাধ্যবাধকতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ১৯০৮ সালে, ক্যানবেরাকে অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যত রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
• সিডনি অপেরা হাউস. শহর ছাড়াও, এটি দেশের একটি আইকন হিসাবে বিবেচিত হয়। সিডনি হারবারের পটভূমিতে থিয়েটারটি শিল্প, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্র। এটি সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যসূচক ভবনগুলির মধ্যে একটি, যা সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ দর্শকদের আকর্ষণ করে। থিয়েটারটি ১৯৭৩ সালে খোলা হয়েছিল এবং এমনকি ইউনেস্কোর সুরক্ষার অধীনে রয়েছে, যা এটিকে “বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান” এর মর্যাদা প্রদান করেছে। এ জায়গাটিতে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর পরই রাতের বেলা ঘুরে দেখি।
• অস্ট্রেলিয়ার হেলথ কেয়ার/মেডিকেয়ার সিস্টেমকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর চিকিৎসা সেবা হিসেবে আখ্যায়িত করা করে থাকে। শুধুমাত্র ডেন্টাল কেয়ার ছাড়া সব ধরনের মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এই সেবার আওতাধীন যেখানে জনগণ ও স্থায়ী বাসিন্দারা বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। অবাক করা তথ্য হলো, দেশটিতে একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভধারণ থেকে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত নিজের পকেটের এক টাকাও খরচ করতে হয় না সাধারণত।
• ‘উড়ন্ত’ ডাক্তার. আক্ষরিক অর্থে বলা হয় “রয়্যাল ফ্লাইং ডক্টর সার্ভিস অফ অস্ট্রেলিয়া”। এটি এমন একটি পরিষেবা যা আপনাকে প্রদান করতে দেয় স্বাস্থ্য সেবাযারা মহাদেশের প্রত্যন্ত এবং বিচ্ছিন্ন এলাকায় বাস করে। এই অলাভজনক সংস্থাযা তাদের সাহায্য করে যারা কাছাকাছি হাসপাতালে যেতে পারে না। তিনি অস্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতির প্রতীক এবং আইকন হয়ে উঠেছেন।
• অস্ট্রেলিয়াতে আগামী প্রজন্ম অর্থাৎ শিশুদেরকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার ফলাফল হিসেবে একটি শিশুর জন্ম পূর্ব থেকে পরবর্তীতে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধার নিশ্চিত করে সরকার। অন্যদিকে, বয়স্ক বা এইজ ওল্ডদের ব্যাপারেও একই গুরুত্ব দিয়ে তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সরকার।
• অস্ট্রেলিয়ানদের নির্বাচনে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। নাহয় গুণতে হয় বিপুল জরিমানা। অস্ট্রেলিয়াতে নারীরা ভোটাধিকার অর্জন করে ১৯০২ সালে। নারীদের ভোটাধিকার প্রদান এর দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের যারা এই ভূমির আসল মালিক, সাংবিধানিকভাবে তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে তাদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা, শ্রদ্ধা। সম্মানের সঙ্গে তাদের সাথে কথা বলার নিয়ম রয়েছে।
• অজিরা অত্যন্ত কফি প্রিয় জাতি। মোটামুটি ৮০ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ানের সকাল শুরু হয় এক কাপ কফি দিয়ে। দোকানের কফি এদের বেশি প্রিয়। তাই বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানই কফির জন্য নিকটস্থ প্রিয় কফি শপে ভিড় জমান। অস্ট্রেলিয়ান “জাতীয়” খাবার – ভেজিমাইট। ভেজিমাইট হল একটি প্রক্রিয়াজাত খামির, একটি বাদামী ভর যার তীব্র গন্ধ এবং বেশ নোনতা। এটি একটি খুব পাতলা স্তরে রুটির উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
• অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি জাতীয় খাবার হল মিট পাই, মাংসের পাই একটি ময়দার ঝুড়ির আকারে, ঝুড়িটিও উপরে ময়দা দিয়ে ঢাকা থাকে। কিমা করা মাংসের ভিতরে সব ধরণের সংযোজন এবং মশলা, সাধারণত খুব তরল। মাংসের পাই হিমায়িত সুবিধার খাবার হিসাবে সুপারমার্কেটে বিক্রি হয়।
• জীব বৈচিত্র্যে এই দেশ পৃথিবীর সবথেকে আলাদা। এখানে কীটপতঙ্গ, জীব-জন্তু কিংবা পাখ-পাখালির এত প্রকরণের দেখা মেলে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। দেশটির প্রতি ৫ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে অন্তত ৪ প্রজাতির প্রাণীই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, দেশটির অন্তত ৮০ শতাংশ গাছ-গাছালি ও প্রাণীর আবাসস্থল শুধুমাত্র সেখানেই। পৃথিবীর অন্য কোথাও এই প্রাণীদের অস্তিত্ব নেই।
• অস্ট্রেলিয়ার আয়তন ২৯ লাখ বর্গমাইল। এই আয়তন ২১ লাখ বর্গমাইল আয়তনের গ্রিনল্যান্ডের আয়তনের কাছাকাছি। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডকে দ্বীপদেশ বলা হলেও অস্ট্রেলিয়াকে মহাদেশ বলা হয়। কেন? এখানেও মূল কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিরল ও স্বতন্ত্র জীববৈচিত্র্য। অস্ট্রেলিয়ার মানচিত্রের দিকে তাকালে বোঝা যায় যে দেশটি অবস্থানগত দিক থেকে বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। হাজারো বছর ধরে এই বিচ্ছিন্ন অবস্থা দেশটিতে স্বজাতীয় জনগোষ্ঠী, স্বতন্ত্র গাছপালা ও জীববৈচিত্র্য প্রজননে সাহায্য করেছে।

• অস্ট্রেলিয়ার কোট অফ আর্মসটিতে দুটি জাতীয় প্রাণী রয়েছে, যেমন ক্যাঙ্গারু এবং ইমু। তারা কেবল জাতীয় বলেই নয়, বরং এই দুই প্রাণীর প্রতিনিধি ফিরে যেতে পারে না বলেও তাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল। এটি এক ধরণের প্রতীক যে “আমরা কেবল এগিয়ে যাচ্ছি!”। অস্ট্রেলিয়ায় মানুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি ক্যাঙ্গারু রয়েছে।
• এটি আশ্চর্যজনক প্রাণী এবং উদ্ভিদের জন্মস্থান। প্রায় সমস্ত মার্সুপিয়াল, যারা তাদের শাবক একটি ব্যাগে বহন করে – তাদের পেটে একটি পকেট, তারা এখানে বাস করে। এগুলি হল কোয়ালাস, এবং ক্যাঙ্গারু এবং মজার কুসকুস নামের প্রাণী। প্লাটিপাস অস্ট্রেলিয়ার নদীগুলিতে বাস করে: তাদের ঘন বাদামী পশম, চারটি থাবা-ফ্লিপার, একটি স্প্যাটুলা সহ একটি লেজ এবং হাঁসের মতো একটি মাথা ও নাক রয়েছে। বহু রঙের বুজরিগার এবং ক্রেস্টেড ককাটুস আকাশে উড়ছে।
• অস্ট্রেলিয়াতেও ইমু আছে। এই প্লায়ারগুলি কীভাবে উড়তে হয় তা জানে না, তবে তারা খুব দ্রুত দৌড়ায়, কারণ তাদের শক্তিশালী পা রয়েছে। ইউক্যালিপটাস এবং পাম গাছ, ফার্ন এবং বাবলা অস্ট্রেলিয়ার বনে জন্মে। এবং এমনকি একটি বোতল গাছ: এর কাণ্ড নীচে খুব পুরু, এবং উপরের দিকে এটি পাতলা – পাতলা হয়ে যায়। এখানে মানুষের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি ভেড়া রয়েছে।
• মহাদেশের সমগ্র উপকূল বরাবর বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল কাঠামো প্রসারিত – গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ. এই পানির নিচের প্রবাল শিলা জাহাজের জন্য বিপজ্জনক, কিন্তু যারা স্কুবা গিয়ার নিয়ে সমুদ্রে ডুব দেয় তাদের জন্য একটি অবিস্মরণীয়, সহজভাবে কল্পিত ছবি খুলে যাবে।
